সৌদি আরবে পবিত্র হজ করতে গিয়ে জামারাতে শয়তানকে পাথর মারার সময় হুড়োহুড়িতে পদদলিত হয়ে প্রচুর মুসল্লি মারা যেত। এটা দেখে বাংলাদেশ থেকে হজ করতে যাওয়া একজন প্রকৌশলী চিন্তা করলেন কিভাবে এই মৃত্যু বন্ধ করা যায়।

তিনি হজ করে দেশে ফিরে পরবর্তীতে তিনি একটি প্ল্যান সাবমিট করেন বাংলাদেশের ফরেন মিনিস্ট্রি ও রিলিজিয়াস এফেয়ার মিনিস্ট্রিতে। সেখান থেকে সৌদি হাইকমিশনে যোগাযোগ করা হয় এবং এই প্ল্যান তারা বাস্তবায়ন এর সিদ্ধান্ত নেয়।
পরবর্তীতে তার প্ল্যান এত অসাধারণ ভাবে সফল ছিল, যে খোদ সৌদি বাদশা খাদেমুল হারামাইন ফাহাদ তাকে ‘মুহিব্বুল খায়ের’ হিসেবে উপাধি দেন এবং তার জন্য উপহার সামগ্রী পাঠান। কাবা শরীফের তৎকালীন প্রধান ঈমাম শায়খ আবদুস সুবাইল তাঁকে বলেন ‘পৃথিবীর ১০ জন সেরা প্রকৌশলীদের মধ্যে ইব্রাহীম একজন।’ সেই প্রকৌশলী হচ্ছে বাংলাদেশের আলহাজ মোহাম্মদ ইব্রাহীম।
এক সময় মিনায় প্রকল্পের পাশের রাস্তার ধারে Engineer Ibrahim from Bangladesh লিখে সবুজ গালিচায় সাদা অক্ষরে টাঙিয়ে দেয়া হয় তার উদ্দেশ্যে। তিনি মুসলিম বিশ্বে ‘আর্কিটেক্ট অব মডিফিকেশন প্লান অব জামরা’ নামে খ্যাত। এখনো তার নাম লেখা আছে জামারাতে।

আলহাজ মোহাম্মদ ইব্রাহীম (প্রাক্তন চিফ ইঞ্জিনিয়ার, বিসিআইসি) ১৯৪১ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আলহাজ মো. ইদ্রিস সেখানকার স্কুলের হেডমাস্টার ছিলেন। পড়াশোনায় ছিলেন মেধাবী। ১৯৬২ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বুয়েটে ভর্তি হন। কিন্তু তৃতীয় বর্ষে উঠে স্বাস্থ্যগত কারণে রাজশাহী বিআইটিতে মাইগ্রেশন নিয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি লাভ করেন। জাপানে উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণ করেন।তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত ছিলেন: শিক্ষা বিভাগ, বিআরটিসি, ওয়াপদা এবং পরিশেষে বিসিআইসিতে।বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশে তার ডিজাইনে তৈরি বাসাবাড়ি, সুউচ্চ ভবন ও বিভিন্ন স্থাপনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সর্বত্র।
১৯৯৪ সালে প্রথম সস্ত্রীক হজ করেন। সেখানে তিনি লক্ষ করেন, অদক্ষ ব্যবস্থাপনার জন্য প্রতি বছরই শয়তানকে পাথর মারতে গিয়ে পদদলিত হয়ে অনেক প্রাণহানি ঘটছে। একই কারণে সেবার ২৭০ জন হাজী মারা যান।
সেবার তিনি দেশে ফিরেই পাথর মারার এক মডেল তৈরি করলেন, ওয়ান ওয়ে পদ্ধতিতে বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনা শয়তানকে পাথর মারতে আগে কোনো নিয়ম ছিল না। যে যেদিক থেকে যেভাবে পারত, পাথর মারা শুরু করত এবং একপর্যায়ে বিশৃঙ্খলায় পদদলিত হয়ে প্রাণ হারাত। হজের সময় পাথর মারার জন্য প্রত্যেক হাজিকে সৌদি আরবের মিনায় তিন দিন অবস্থান করতে হয়। যে তিনটি স্তম্ভে পাথর মারতে হয় তাকে বলে জামরা বা পাথরের স্তূপ। এটা শয়তানের প্রতীকী স্তম্ভ। প্রথম জামরার নাম জামরাতুল আকাবা, মধ্যেরটি উস্তা ও শেষেরটি উলা। একটি থেকে অন্যটির দূরত্ব মোটামুটি ৩৩০ মিটার।
তার পরিকল্পনাটির চারটি ধাপ রয়েছে। এই পরিকল্পনাটির সংক্ষিপ্তসার হলো ……
১. প্রতিটি জামরাকে বেড়া দিয়ে পরস্পর সংযুক্ত করা, ফলে উভয় দিকে দু’টি রাস্তার সৃষ্টি হলো।
২. জামরার দেয়াল এর প্রস্থ অনেক কম ছিল, তা উভয় দিকে অন্তত ৩০ ফুট করে বাড়িয়ে নেয়া।
৩. ওয়ানওয়ে ট্রাফিক সিগনালের ব্যবস্থা করা।
৪. এরপর মিনার দিকে ‘ইন’ ও অপর প্রান্তে ‘আউট’ বসিয়ে জনতার স্রোত একমুখী চালনা করা। এদিক দিয়ে ঢুকে ওদিক দিয়ে বেরিয়ে যাবে। কেউ পেছনে ফিরবে না।

প্রস্তাবটি ঢাকার ধর্ম মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে সৌদি দূতাবাসের মাধ্যমে ডিপ্লোমেটিক ব্যাগে সৌদি সরকারের কাছে উপস্থাপিত হলে তারা পরিকল্পনার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেন। বর্তমানে পরিকল্পনাটি জামরায় পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং পাথর মারার এবাদতটি একেবারেই সহজ হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে খাদেমুল হারামাইন বাদশাহ ফাহাদ তাকে ‘মুহিব্বুল খায়ের’ বা কল্যাণকামী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
কাবা শরিফের প্রধান ইমাম শায়খ আবদুস সুবাইল প্রশংসা করে বলেছেন ‘পৃথিবীর ১০ জন সেরা প্রকৌশলীর মধ্যে ইব্রাহীম একজন। কেননা হাজারো প্রকৌশলী হজ করে গেছেন মক্কায় কিন্তু কখনো এ বিষয়টি নিয়ে এর আগে কেউ ভাবেননি বা সমস্যা নিরসনের উদ্যোগও গ্রহণ করেননি।শুধু তাই নয়, পরে তাকে পবিত্র মক্কায় প্রকল্পপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।
তার উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে ‘How to build a nice Home’ বেশ জনপ্রিয়তা পায় যা বুয়েটসহ অন্যান্য ভার্সিটিতে রেফারেন্স বই হিসেবে পঠিত হয়।অন্যান্য বইয়ের মধ্যে রাহে মক্কা রাহে মদিনা ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রইং, কোরানিক গাইড, হজ পরিক্রমা, স্বল্প মূল্যে গৃহনির্মাণ, আল কুরআনে আধুনিক বিজ্ঞান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ৭৫ বছর বয়সে এই মহান ব্যক্তি ২০১৭ সালের ৮ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন
সোর্সঃ Somoy News tv, The Daily Star & other’s
AUTHOR:
Engr.Towhidul Islam
JOIN US
FB Group : https://www.facebook.com/groups/CivilianStudyZone
FB Page : https://www.facebook.com/DesignIntegrityBd
Website: http://dil.com.bd
Blog: https://blog.dil.com.bd