সম্প্রতি ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মান কাজের উদ্বোধন করেন। ২০২৩ সালের জুনের মধ্যেই তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে তা যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা সম্ভব হবে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৩য় টার্মিনাল

জাপানের মিতসুবিশি করপোরেশন, ফুজিতা করপোরেশন ও স্যামসাং মিলে গঠিত এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি) এই নির্মাণ কাজের দায়িত্বে রয়েছে। প্রকল্পটি তদারকি করবে নিপ্পন জাপান এবং সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের প্রকৌশলীরা।

শাহজালাল তৃতীয় টার্মিনালের অভ্যন্তরীন চিত্র (কালেক্টেড)
এই নতুন তৃতীয় টার্মিনাল এর কাজ চলছে খুবই দ্রুত গতিতে, কোভিড-১৯ এর কারণে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ কাজ একদিনের জন্যও বন্ধ ছিল না। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এতে কর্মরত জনবলের জন্য আলাদা বাসস্থান, কোভিড-১৯ এ আক্রান্তদের কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা, চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণসহ নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
তবে সম্প্রতি এই প্রজেক্টে নতুন এক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে,কিছু দিন আগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ কাজের পাইলিং এর সময় একটি পুরনো বোমা উদ্ধারের খবর বেশ সাড়া জাগিয়েছে।পাইলিং এর সময় মাটির প্রায় ৩ মিটার গভীর থেকে সিলিন্ডার স্বরূপ এই বোমা উদ্ধার করা হয়।বোমাটি নিষ্ক্রিয় করে ময়মনসিংহ বিমান বাহিনীর মুক্তাগাছা ঘাটিতে পাঠিয়ে দিয়েছে বিমান বাহিনীর বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। বোমা সাদৃশ বস্তুটির যাচাই বাছাই করতেই সেখানে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে ।
শাহজালাল বিমানবন্দরে ‘বোমা’ উদ্ধার
এরই কিছু দিনের ব্যবধানে তৃতীয় টার্মিনালের সাইট থেকে আরো দুই বার বড় আকৃতির একটি বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে ডিসেম্বর মাসেই বিমানবন্দর থেকে মোট ৪টি বোমা উদ্ধার করা হলো। সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে চতুর্থ বোমাটি উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, এ বোমাটির ওজনও আগের গুলোর মতোই ২৫০ কেজি হতে পারে। খবর পেয়ে বিমানবাহিনীর বঙ্গবন্ধু ঘাঁটির বোমা ডিসপোজাল ইউনিট সেখানে উপস্থিত হয়ে বোমাটি উদ্ধার করে। এর আগে গত ৯, ১৪ এবং ১৯ ডিসেম্বর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনালের সাইট থেকে আড়াইশ’ কেজি ওজনের তিনটি বোমা উদ্ধার করা হয়েছিল।
পরে বোমাগুলো উদ্ধার করে টাঙ্গাইলের বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে নিয়ে ধ্বংস করা হয়।
বিমানবাহিনীর বঙ্গবন্ধু ঘাঁটির বোমা ডিসপোজাল ইউনিট এর বোমা উদ্ধার

বিমানবন্দরে বোমা কেন?

মুক্তিযুদ্ধের সময় গড়ে ওঠা বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ৩রা ডিসেম্বরে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানী বাহিনীর ওপর বিমান হামলা চালিয়েছিল ঢাকা ও চট্টগ্রামে। তখনকার ওই হামলায় অংশ নিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন সাহাবুদ্দিন আহমেদ – মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য যিনি বীর উত্তম খেতাব পান।

বিবিসি বাংলাকে ক্যাপ্টেন আহমেদ বলেন, যুদ্ধের সময় মূল বিমানবন্দরগুলোতে হামলা চালানোর কাজটি করেছিল ভারতীয় বিমান বাহিনী, কারণ বাংলাদেশের বিমান বাহিনীর তখনও মূল বিমানবন্দরে হামলা চালানোর মতো সক্ষমতা ছিল না।তিনি জানান, মূল বিমানবন্দরের বাইরে অপেক্ষাকৃত কম সুরক্ষিত ঘাটিগুলোতে হামলা করতো বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। আর এ কারণেই ঢাকার বিমানবন্দর থেকে উদ্ধার হওয়া বোমাটি ভারতীয় বিমান বাহিনী থেকে ফেলা হয় বলে মনে করেন তিনি। আর সেই বোমা হামলার অবিষ্পরিত বোমাগুলোই পাওয়া যাচ্ছে বিমানবন্দরে।

কেন এই বোমা এতদিন পরেও পাওয়া যাচ্ছে?

আকাশ থেকে ফেলা বোমা বিস্ফোরিত হবে কি-না, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা নির্ভর করে সেটি কোন সারফেস বা কোন জায়গায় গিয়ে পড়ছে, বিষয়টি ব্যাখ্যা করে ক্যাপ্টেন সাহাবুদ্দিন আহমেদ বলছিলেন।

তিনি বলেন, বোমাটি যদি কংক্রিটের উপর পরে তাহলে সেটি সাথে সাথে বিস্ফোরিত হয়। আর যদি সেটি নরম মাটি বা কাদার মধ্যে পড়ে তাহলে সেটি বিস্ফোরিত হয় না। সেটি কাদা বা মাটিতে ঢুকে যায় এবং পরে অনেক দিন ধরে টিকে থাকতে পারে।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফেলা হয়েছিল এমন অনেক বোমা এখনও পাওয়া যায়, যেগুলো অবিস্ফোরিত অবস্থায় রয়ে গেছে।

কি করনীয় ?

থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের জন্য চারটি প্রতিষ্ঠানকে যৌথভাবে পরামর্শক  হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় ২০১৭ সালের ১১ জুন। চারটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে, জাপানের নিপপন কায়ো, ওরিয়েন্টাল কনস্যালটেন্ট গ্লোবাল, সিঙ্গাপুরের সিপিজি কনস্যালটেন্ট ও বাংলাদেশের ডিজাইন কনস্যালটেন্টস লিমিটেড। এই সব প্রতিষ্ঠানের অধীনে দেশি-বিদেশী ইঞ্জিনিয়ার সহ বহু শ্রমিক কাজ করছে। এদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে পুরো প্রকল্প এরিয়াতে সার্চ করে ,যদি আরো বোমা থেকে থাকে সেটা আগেই উদ্ধার করা উচিত। কাজ করার সময় বোমাগুলো উদ্ধার করা হলে সেটা খুবই ঝুঁকিপূর্ন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here